দল ক্ষমতার বাইরে। নিজেও হেরে গিয়েছেন। কিন্তু গৌতম দেব বদলাননি। হাওড়ায় একটি সভার পরে এত অটোগ্রাফ দিয়েছেন যে, এক সাংবাদিক তাঁকে বলেই ফেলেছেন, “আপনাকে দেখে কে বলবে, ৩০ হাজারের বেশি ভোটে হেরেছেন!” মজাই পেয়েছেন গৌতমবাবু! সম্প্রতি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা এক আলোচনাসভায় তাঁকে ডেকেছিলেন। গৌতমবাবুর পাশে অন্য প্রাক্তন মন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায়। গৌতমবাবু প্রথমে বললেন, “সফি’কে (সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ সৈফুদ্দিন চৌধুরী) আমিই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এনেছিলাম। সফি অবশ্য সিনিয়র। তবে উচ্চশিক্ষায় একটু গ্যাপ হয়ে গিয়েছিল। আমিই নিয়ে এসেছিলাম!” একটু পরে বললেন, “এই যে মানব। ওদের আমিই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এনেছিলাম!” মানব মাথা নিচু করে স্মিত হাসলেন। তিনি গৌতম। তিনিই দেব। |
ঘণ্টাখানেক আগে তিনি টিভিতে। লাইভ। বৈঠকখানা বাজারের একাংশে অগ্নিকাণ্ডের অকুস্থলে। পরনের পাঞ্জাবি ভিজে সপসপে। খানিকটা দমকলের ফোয়ারায়। বেশিটাই ঘামে। ঘণ্টাখানেক পর তিনিই টিভিতে। লাইভ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে। গায়ের ভেজা সুতির পাঞ্জাবি কি গায়েই শুকোলেন নাকি? ভারী মিষ্টি ট্রেডমার্ক হাসিটা হাসলেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, “না না। গাড়িতে কয়েক জোড়া ধুতি-পাঞ্জাবি থাকে। কখন কোথায় ছুটতে হবে! ওখানে জল। সেখানে আগুন। রোদ-ঝড়-জল। বাড়ি গিয়ে তো আর জামাকাপড় বদলে আসা যাবে না। তাই দিদি (দলনেত্রী মমতা) বলে দিয়েছেন, গাড়িতেই একস্ট্রা রেখে দিতে। শুধু আমি নই। তৃণমূলের সকলকেই।” |
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মহাকরণে একান্ত বৈঠক সেরে বিধানসভায় নিজের ঘরে সবে ফিরেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। টিভিতে দেখলেন, তখনও ‘ব্রেকিং নিউজ’ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিরোধী দলনেতার বৈঠক শুরু! সহাস্যেই স্বগতোক্তি করলেন বিরোধী দলনেতা, “আমি তো এখানে বসে! আলোচনার পরে ওরা (বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যম) তো আমার বাইটও নিয়ে নিয়েছে!” বলতে বলতেই তাঁর বক্তব্য টিভি-তে। ঘরেই হাজির সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের প্রতিনিধি। উঠে গিয়ে দ্রুত অফিসকে ফোন করে বললেন, ‘ব্রেকিং নিউজ’ বন্ধ করতে।
|
পলিটব্যুরোর বৈঠক শেষে মহাজাতি সদনে মুজফ্ফর আহমেদের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠান। প্রথমার্ধের বৈঠকের পর বাড়ি ফেরার পথে ট্রাফিক জ্যামে বেশ কিছু ক্ষণ দাঁড়িয়েছিল তাঁর গাড়ি। দ্বিতীয়ার্ধের বৈঠক শেষে আলিমুদ্দিনের নীচে দেখা গেল, কারও জন্য অপেক্ষমান প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। গাড়িতে উঠেও অপেক্ষা। শেষমেষ ডান দিকের দরজাটা খুলে উঠে পড়লেন পলিটব্যুরোর সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি। সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট গেলেন বিমান বসুর গাড়িতে। মানিক সরকার এখনও মুখ্যমন্ত্রী। তাই গাড়িতে একাই। বিনয় কোঙার সাধারণত যে বড় গাড়িটা ব্যবহার করেন, তাতে একসঙ্গে কে বরদারাজন, কোডিয়ারি বালকৃষ্ণনের দুই বিশাল বপু। সঙ্গে পাতলা চেহারার বি রাঘুভুলু। এমনকী, এস আর পিল্লাইও। সিপিএমেরই একাংশের মতে, এই বাহন-বিন্যাসেই স্পষ্ট পলিটব্যুরোর অন্দরের সমীকরণ! |
দলে তাঁর সমসাময়িকরা মন্ত্রী হয়ে গিয়েছেন। তাঁর ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি। কিন্তু তৃণমূল বিধায়ক অরূপ বিশ্বাস, খবরের কাগজের ভাষায় যাকে বলে, ‘আন-পুটডাউনেবল’। এলাকার কাজ চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নিজেকে নিয়োজিত করেছেন বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কাজেকম্মে। যেমন মোহনবাগানের শিল্ড জয়ের শতবার্ষিকীর জন্য বিখ্যাত গায়ক-গায়িকাদের নিয়ে বিশেষ সিডি ‘নিবেদন’। অথবা কিশোরকুমারের জন্মদিনে টালিগঞ্জের মোড়ে টলিউডের নায়কদের দিয়ে অনভ্যস্ত গলায় গান গাওয়ানো। সঙ্গে বাধ্যতামূলক ‘জয় মমতা’। দলীয় সতীর্থ কি আর সাধে বলছেন, “হুঁ হুঁ বাবা, দাবায়ে রাখতে পারবা না!” |