অ্যাকাডেমিতে রবীন্দ্র-চিত্র প্রদর্শনী
অদেখা ৩৭
ংখ্যাটি চমকে দেয়। জীবনের প্রায় শেষ পর্বে ছবি আঁকতে শুরু করেছিলেন যে রবীন্দ্রনাথ তাঁর আঁকা ছবির সংখ্যা দু’হাজারেরও বেশি! কিন্তু তাঁর রচনাবলি নানা মাত্রায় প্রকাশিত হতে থাকলেও বিভিন্ন সংগ্রহভুক্ত এই সব ছবি দেখার সুযোগ ছিল না। তাঁর জন্মশতবর্ষেও সংগ্রহগুলির বেশির ভাগই ছিল সাধারণ দর্শকের নাগালের বাইরে। খুব সামান্য একটি অংশই প্রকাশিত হয়েছে পত্রপত্রিকা ও গ্রন্থাকারে। রবীন্দ্রনাথ এ সব ছবি নিয়ে ভাঙাগড়া করেছেন অনেক বার, তার সব কটি রূপ তো দূরের কথা, ছবিগুলির চূড়ান্ত রূপও কিছুকাল আগেও ছিল অধরা। নিজের ছবি বার বার নষ্ট করেছেন তিনি। রাণী চন্দের আলাপচারী রবীন্দ্রনাথ-এ নিজের ছবি সম্পর্কে বলছেন, ‘আমার ছবি যখন বেশ সুন্দর হয়, মানে সবাই যখন বলে বেশ সুন্দর হয়েছে তখনি আমি তা নষ্ট করে দিই। খানিকটা কালি ঢেলে দিই বা এলোমেলো আঁচড় কাটি। যখন ছবিটা নষ্ট হয়ে যায়, তখন তাকে আবার উদ্ধার করি। এমনি করে তার একটা রূপ বের হয়।’
সেই রূপের সমগ্রতার পথে আরও এক প্রদর্শনী আজ থেকে। অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সংগ্রহে রবীন্দ্রনাথের আঁকা যে ৩৭টি ছবি আছে সেগুলি চার বছর পরে দেখা দেবে মাত্র তিন দিনের জন্য (৮-১০ অগস্ট)। অ্যাকাডেমির রবীন্দ্র গ্যালারিতেই ছবিগুলি আছে। ইতিমধ্যে তার পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বিশ্বভারতীর সহায়তায়। আজ বেলা ১২টায় প্রদর্শনীর সূচনা। অ্যাকাডেমির অছি পরিষদের সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায় জানালেন, গ্যালারির সব প্রদর্শের খতিয়ান নেওয়া চলছে, সেটি খুলে যাবে এ বছরই অক্টোবর মাসে। পাশাপাশি এই সে দিন গভীর রাতে শহরে পৌঁছল রবীন্দ্র-চিত্রাবলী। বিশ্বভারতী ও প্রতিক্ষণ যৌথ ভাবে প্রকাশ করেছে চার খণ্ডে রবীন্দ্রনাথের ছবির মহা-সংগ্রহটি। কিন্তু প্রায় দু’হাজার ছবির এই সংগ্রহে অ্যাকাডেমির ৩৭টি নেই। বইটির প্রকাশক প্রিয়ব্রত দেব জানিয়েছেন, ছবিগুলি সংকলনভুক্ত করার অনুমতি যখন পাওয়া গিয়েছিল তখন বইয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে। তবে এই ৩৭টি ছবি নিয়ে একটি পরিপূরক খণ্ড প্রকাশিত হবে। সঙ্গের ছবিতে অ্যাকাডেমির প্রদর্শনী, প্রস্তুতি পর্বে।

অবন-স্মরণ
তাঁর স্মৃতি চাপা পড়ে যায় প্রতি বছর বাইশে শ্রাবণ। সে দিন তাঁর রবিকা-র মৃত্যুদিন যে! আর এ বার তো কথাই নেই, রবি ঠাকুরের সার্ধশতবর্ষ। মৃত্যুদিনের উদ্যাপন ছাপিয়ে গিয়েছে জন্মদিনকেও। বাইশে শ্রাবণ যে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পাশাপাশি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনও সেটা প্রায় ভুলেই যাই আমরা। কিন্তু এ বার খুব সামান্য হলেও আছেন তিনি, রবিকা-র সঙ্গেই। নন্দন চত্বর জুড়ে যে রবীন্দ্র বইমেলা এবং রবীন্দ্র-উদযাপন তারই মধ্যে শিশু কিশোর আকাদেমির আয়োজনে হয়ে গেল ছোটদের নিয়ে এক অনুষ্ঠান, ‘আমাদের অবন ঠাকুর’। কর্মশালায় ছবি আঁকল ছোটরা, অবন ঠাকুরকে নিয়ে বললেন শিল্পী শুভাপ্রসন্ন। এ দিকে প্রকাশ ভবন থেকে প্রায় চার দশক জুড়ে প্রকাশিত হতে থাকা অবনীন্দ্র রচনাবলির নবম ও শেষ খণ্ডটি দিনের আলো দেখেছে সম্প্রতি।

লেখার ছবি
শুরু হরিশ্চন্দ্র হালদার থেকে। ‘বালক’ পত্রিকায় ‘রাজর্ষি’ উপন্যাসের সঙ্গে প্রকাশিত অলংকরণ। রবীন্দ্রসৃষ্টির অলংকরণের প্রথম যুগ থেকে বিজন চৌধুরীর মতো সমকালীন শিল্পীর হাতে একে একে ষাটটি অলংকরণ, সবগুলিই রবীন্দ্রসৃষ্টির। অবনীন্দ্রনাথ-গগনেন্দ্রনাথ-নন্দলাল তো আছেনই, আছেন হ্যারি বেনস বা বরিস আর্টজাবাইশেফের মতো বিদেশি শিল্পীর কাজও। রবীন্দ্রসৃষ্টির অলংকরণের দীর্ঘ শতবর্ষ পেরনো ইতিহাস থেকে নির্বাচিত ষাটটি ছবির এক সুদৃশ্য অ্যালবাম প্রকাশ করল প্রতিক্ষণ, রবীন্দ্রনাথের লেখার ছবি (সূচনাকথা পূর্ণেন্দু পত্রী, সংকলন ও সম্পাদনা অর্চি মিত্র, ৩০০.০০)। বাক্সে ভরা এই চমৎকার সংকলনটির প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছেন যোগেন চৌধুরী। আছে প্রতিটি অলংকরণের উৎস বিবরণ ও পরিচয়। প্রসঙ্গত, রবীন্দ্রসৃষ্টির অলংকরণ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা করছেন অভীককুমার দে। পূর্বাঞ্চল সংস্কৃতি কেন্দ্রের উদ্যোগে এ নিয়ে তাঁর পরিকল্পনায় একটি প্রদর্শনীও হয়েছে। প্রকাশিত হতে চলেছে একটি বড় সংকলনও।

উত্তরণ
বাইশে শ্রাবণ কি শুধু শোকের দিন? রবীন্দ্রসংগীত অন্তত তা বলে না। সেখানে আছে শোক থেকে উত্তরণের দিশা। এই ভাবনাটিকে সম্বল করেই বাইশে শ্রাবণে সারেগামা প্রকাশ করেছে দুটি সিডি-র একটি সংকলন, ‘তবু অনন্ত জাগে’। অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং গোবিন্দগোপাল-মাধুরী মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে রবীন্দ্র-অনূদিত দুটি বেদগান দিয়ে শুরু, তার পরে প্রবীণ-নবীন শিল্পীর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুচেতনার গান।

আলেখ্য
মৃত্যুকে তিনি বলেছেন: ‘জীবনের একটি বাঁকমাত্র’। এ বারের বাইশে শ্রাবণ দিনটি রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের সত্তর বছর পূর্তি। এ-উপলক্ষে ‘শ্রাবস্তী’-র প্রথম অডিয়ো-সিডি আমার যাবার বেলাতে প্রকাশ করবেন শঙ্খ ঘোষ, আজ ম্যাক্সমুলার ভবনে সন্ধে ৭টায়। কবির জীবনের শেষ কয়েকটি দিনের স্মৃতিঘেরা এই আলেখ্যটির ভাবনা-সংগঠন-ভাষ্য-পরিচালনা চৈতালি দাশগুপ্তের। সংগীতের কণ্ঠ ও যন্ত্রবাদনে, এবং পাঠে আছেন বিশিষ্ট শিল্পীরা। প্রযোজনায় রাজা দাশগুপ্ত।

তারাদাস-স্মৃতি
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুত্র সুসাহিত্যিক তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়াণের এক বছর হল গত ১৮ জুলাই। তাঁর শিল্পিত যাপনের অন্য একটি দিক ছিল ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের চর্চা। লেখক বালক বয়সেই বাড়িতে ওস্তাদজিদের সান্নিধ্য ও প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন। তরুণ বয়সে তালিম পেয়েছিলেন বেহালা ও সরোদে। তাঁর প্রায় সারা জীবন-ই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের শাস্ত্রীয় সংগীত ও রবীন্দ্রগানের সক্রিয় সান্নিধ্যে কেটেছে। এই নিরিখে বিভূতি স্মারক সমিতি ট্রাস্ট ও তারই সংগীত বিভাগ মেঘমল্লার, শাস্ত্রীয় সংগীত সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে তাঁর প্রথম বার্ষিক স্মরণ পালন করতে চলেছে ১৩ অগস্ট, ব্যারাকপুর সুকান্ত সদনে, সন্ধে ছ’টায়। প্রথম পর্বে মানুষ ও সাহিত্যিক তারাদাস বিষয়ে বলবেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। দ্বিতীয় পর্বের শাস্ত্রীয় সংগীতে প্রধান গায়ক সুগত মারজিৎ।

নষ্টনীড়
ছোটবেলায় দেখেছিলেন উদয়শঙ্করের ‘শঙ্করস্কোপ’। তা থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে চলচ্চিত্রকার ও নাটক-নির্দেশক গৌতম হালদার চারুলতাকে তুলে আনলেন একই সঙ্গে পর্দায় ও মঞ্চে সিনে-প্লে বা ছায়ানাটকে। গৌতমের কথায়: ‘রবীন্দ্রনাথ অসাধারণ শৈল্পিকতায় অনেক অনুচ্চারিত কথা বুনে গেছেন নষ্টনীড়-এ, যেগুলি খুব স্পষ্ট। সে সবই অন্য ভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছি।’ নষ্টনীড়-এ একরাশ একাকিত্বের মাঝে স্বামীর করুণাকে চারু প্রত্যাখ্যান করে, বলে ‘না থাক’। সব নারীর সর্বকালীন প্রতিবাদের বীজ বুঝি লুকিয়েছিল চারুর সেই ‘না’-এ। এই জায়গাটাকেই গৌতম ধরতে চেয়েছেন। সম্প্রতি এটি প্রথম বার মঞ্চস্থ হল। গৌতমের ছায়ানাটকে ভূপতি, অমল, চারুলতা হলেন দুলাল লাহিড়ি, শুভ্রজিৎ দত্ত এবং ঋতাভরী চক্রবর্তী। আছেন সত্যজিতের ‘অমল’ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-ও, কিন্তু সূত্রধরের ভূমিকায়। শুরুতেই সৌমিত্র কেন তিনি সূত্রধর তা স্পষ্ট করে দেন: ‘আমি অমল বলছি। চারুলতা-র অমল, না, না, আজকে আমি অমল নই। আমি আজকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়... ভূপতি-চারুর অন্দরমহলের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তেমনি আজকের চারুর অন্দরমহলের কথাও খানিকটা জানি। তাই... ।’ পরের শো ২২ অগস্ট কলামন্দিরে।

কে ‘সে’?
রবি ঠাকুরের গানে বারেবারেই ঘুরেফিরে আসে যে ‘সে’, সেই ‘সে’ নারী না পুরুষ? কবির এই ‘সে’ নিয়ে লিঙ্গনির্মাণের ইতিবৃত্ত পাওয়া যাবে শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধে, সুধীর চক্রবর্তী সম্পাদিত বাকপতি-বিশ্বমনা-র (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানবপ্রকর্ষ চর্চা কেন্দ্র) দ্বিতীয় সংকলনে। শিবাজী ছাড়াও লিখেছেন অমিয় বাগচি অমিয় দেব স্বপন মজুমদার আলপনা রায় প্রমুখ। প্রথমটির মতো এ-সংকলনেও ১৫টি প্রবন্ধ। শিল্প-সাহিত্য সমাজ থেকে শুরু করে আবিশ্ব বিভিন্ন ভাবনার চিন্তক রবীন্দ্রনাথকে পাঠকগ্রাহ্য করে তোলার জন্যেই কলম ধরেছেন দু’খণ্ড ব্যাপী এই সংকলনের লেখকেরা, জানালেন সম্পাদক। দ্বিতীয় সংকলনটি প্রকাশ করবেন সব্যসাচী ভট্টাচার্য, ১১ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ছ’টায় বিধান নগরে ডি ডি ২৭/ডি-র প্রেক্ষাগৃহে। আয়োজনে ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের উদ্যোগে ওই প্রেক্ষাগৃহেই ১১-১৩ অগস্ট আন্তর্জাতিক সম্মেলন: রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইন দ্য ওয়র্ল্ড, বলবেন নানা বিশিষ্ট জন, বিষয়েও বৈচিত্রের সমাহার। যেমন একটি উদাহরণ, রবীন্দ্রনাথের গদ্য-উপন্যাসে পুরুষের পোশাক, আলোচক ভাস্বতী চক্রবর্তী।

অন্য রবীন্দ্রনাথ
একদা বিশ্বভারতীর অনুশাসনের মধ্যে থেকেই রবীন্দ্রনাথের ‘রবিবার’ গল্প নিয়ে সাহসী ছবি করে চমকে দিয়েছিলেন নীতিশ মুখোপাধ্যায়। এ বারে চলচ্চিত্রায়িত করছেন কবির বিতর্কিত উপন্যাস চার অধ্যায়। বর্ষার ঘন মেঘ তাঁর ছবির উপজীব্য, কালো মেঘের গর্জন যেমন নির্দয় ধ্বংসের বার্তা বয়ে আনে, তেমনই বর্ষাস্রোত আবার প্রকৃতিকে সৃষ্টিময় সবুজ করে তোলে। কঠোরে-কোমলে এ-উপন্যাসকে, কিংবা ঔপন্যাসিক রবীন্দ্রনাথকে বিপ্লব ও প্রেমের ব্যাকড্রপে ধরতে চেয়েছেন ছবিতে। ‘আমার ছবি চার অধ্যায়-এর অনুসন্ধান নয়, অন্য রবীন্দ্রনাথের অনুসন্ধান, যে রবীন্দ্রনাথকে খুব কম লোক চেনে।’ জানালেন নীতিশ। তাঁর ভাবনার সঙ্গী হিসেবে এ-ছবিতে সংগীত পরিচালনার দায়িত্বে আছেন প্রবুদ্ধ রাহা।

কবির ডাক্তারি
বিশ্বকবি যে ডাক্তারিবিদ্যাতেও উৎসাহী ছিলেন, তা নিয়ে চিকিৎসক শ্যামল চক্রবর্তী বই লিখেছেন একটি: রবি ঠাকুরের ডাক্তারি (সাহিত্য সংসদ, ১৫০.০০)। ১৯৯৯ থেকে বিভিন্ন গ্রন্থাগার, সংগ্রহশালা, চিঠিপত্রের ভাণ্ডারে অনুসন্ধান-অধ্যয়ন চালিয়ে তবে বিষয়টিকে গ্রন্থায়িত করেছেন তিনি, ‘চিকিৎসাবিজ্ঞানের তত্ত্বে গভীর অনুরাগী ও তথ্যে তন্নিষ্ঠ বিজ্ঞাননিষ্ঠ, যুক্তিবাদী রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্কার’ই তাঁর অভিপ্রায়। বইটির একটি অধ্যায়ের টীকা-য় তাই পাওয়া গেল কবির দুর্লভ মন্তব্য: ‘একে তো অভিজ্ঞ ডাক্তার বহুমূল্য তার উপর তাঁরা প্রায়ই অভিজ্ঞ সুশ্রূষার ব্যবস্থা দাবী করেন। ব্যয় সম্বন্ধে একে বলা যায় ডব্ল্ ব্যারেল বন্দুক। রোগীরা এই রাস্তা দিয়ে কখনো ধনে, কখনো ধনেপ্রাণে মরে।’

শান্তিনিকেতন
প্রথম ছবি ‘শূন্য থেকে শুরু’তেই যিনি জাতীয় পুরস্কার ঝোলায় পুরেছিলেন, সেই অশোক বিশ্বনাথনের নির্মীয়মাণ নতুন ছবি শান্তিনিকেতন। তথ্যচিত্র নয়, কাহিনিচিত্র। গুরুগম্ভীর চাল ছেড়ে আড্ডার মেজাজে শান্তিনিকেতনের হালফিল চেহারাটা ধরতে চাইছেন অশোক। সেখানকারই এক পান্থশালায় নানা মানুষের বাস, আসাযাওয়া, তাদের কথাবার্তা-তর্ক থেকেই প্রশ্ন উঠে আসে: রবীন্দ্রনাথের হাতে তৈরি শান্তিনিকেতন কি আদৌ আজ আর তাঁর ভাবনা বা মূল্যবোধ বহন করে? এরই মধ্যে আবার মাওবাদীদের ধরতে ওই পান্থশালায় ঢুকে পড়ে পুলিশ (সঙ্গের ছবি)। অস্থির সময়, তেতো রসিকতা, কৌণিকতায় মোড়া এ-ছবি তৈরির প্রেরণা পেয়েছেন পরিচালক তাঁর মা পারমিতা ও মাতামহ রবীন্দ্র-ঘনিষ্ঠ কালিদাস নাগের সূত্রে।

বিশেষ উদ্যোগ
রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতজন্মবর্ষের সঙ্গেই এ বছর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পঞ্চাশ বছর পূর্তি। এই উপলক্ষে আজ জোড়াসাঁকোয় সূচনা ‘শেষযাত্রা ও অন্য জোড়াসাঁকো’ শীর্ষক দু’টি প্রদর্শনীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চাশ স্মরণে ভারতীয় ডাক ও তার বিভাগের সহযোগিতায় প্রকাশ পাবে একটি বিশেষ প্রথম দিবস কভার। এটির নকশা করেছেন সৌভিক রায়। পরে জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা সুদেষ্ণা বসুর আলোচনা ‘প্রবাসী পাখি ফিরে যেতে চায়’।

রইলে দূরে
সবাই আমাকে শুষ্ক, কঠিন matter of fact বলে জানে। আমি বোধহয় তা নই, আসলে sentimental, সেটা প্রকাশ করতে লজ্জা বোধ হয় বলে চাপা দিই কাঠিন্যের খোলস পরে।’ ২৬ ডিসেম্বর, সম্ভবত ১৯৫২ মীরা চট্টোপাধ্যায়কে লিখেছিলেন রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মীরা-নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র জয়ব্রতের সংগ্রহ থেকে এমনতর বহু চিঠি দিনের আলো দেখতে চলেছে রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবর্ষে। মূলত সে সব চিঠি আর অন্য বহু নথিপত্রের ভিত্তিতে নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ জীবনের জীবনী, আপনি তুমি রইলে দূরে: সঙ্গ নিঃসঙ্গতা ও রথীন্দ্রনাথ (দে’জ)। রথীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পূর্ণ হল। সেই উপলক্ষে প্রকাশিতব্য বইটিতে থাকছে রথীন্দ্রনাথের বহু বিস্ফোরক চিঠিপত্রও, এই প্রথম বার। সঙ্গে বহু ছবি। ১৯৬১-তে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষের সময় একটি চিঠিতে বিরক্ত, বীতরাগ রথীন্দ্রনাথ লিখছেন, ‘যারা বিশ্বভারতীকে ভালবাসত, বাবার প্রতি ভক্তিশ্রদ্ধা ছিল একে একে তাদের বের করে দিল। এরপর কাদের নিয়ে বিশ্বভারতী চালাবে? আমি ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছি।’
 
শতবর্ষে
রবীন্দ্রনাথ আমাকে অনেক চিঠি লিখেছেন। আমাকে দেখতে চেয়েছেন। এঁরা রাজি হননি... বাইরের লোকের সামনে যাওয়ায় এঁদের আপত্তি।’ চব্বিশ বছর বয়সে বিবাহসূত্রে দুবরাজপুরে গিয়েছিলেন আশালতা সিংহ (১৯১১-১৯৮৩)। সেখান থেকে বোলপুর কাছেই। তাঁর লেখা পড়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
দেখতে চেয়েছিলেন তাঁকে। কিন্তু সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আশালতা জানিয়েছেন, শ্বশুরবাড়ির আপত্তিতে দেখা হয়নি, কারণ রবীন্দ্রনাথও তো ‘পরপুরুষ’। ব্যতিক্রমী এই লেখিকার জন্মশতবর্ষ এ বছর। ষোলো বছরে লিখেছিলেন প্রথম বই, অমিতার প্রেম। সে বইয়ের কেন্দ্রীয় চরিত্র অমিতার সঙ্গে তাঁর জীবনের অনেকটাই মিলে যায়। আর এ হেন আশালতার লেখাকে প্রথম প্রকাশ্যে আনেন ‘বিচিত্রা’-সম্পাদক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। সাক্ষাৎকারে আশালতা বলছেন, ‘ভাগলপুরের আদমপুর পাড়ায় উপেন গাঙ্গুলীদের বাসভবন ছিল। ... যখন ‘বিচিত্রা’ মাসিক পত্রিকা প্রকাশে প্রবৃত্ত হলেন, তখন একদিন আমার বাপের বাড়ীতে হানা দিয়ে যা কিছু এযাবৎ লিখেছিলাম গোপনে সব পাণ্ডুলিপি, কোনটা সমাপ্ত, কোনটা অর্ধ সমাপ্ত সব জড় করে নিয়ে গিয়েছিলেন।’ সেটা ১৯২৭। ষোলো বছর বয়সের একটি মেয়ের কলমের সেই ফসলে বিস্মিত হয়েছিলেন সে কালের পাঠকরাও। বুদ্ধদেব বসু যখন আশালতার প্রথম উপন্যাস নিয়ে ঘুরছেন প্রকাশকের দরজায় দরজায় তখন অনেকেই ভেবেছিলেন বু ব-রই বুঝি বা ছদ্মনাম আশালতা দেবী। পরে তিনি হয়ে যান সন্ন্যাসিনী, আশা পুরী। কয়েক বছর আগে তাঁর ছোটগল্পের সংগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে দে’জ থেকে, তপোব্রত ঘোষের সম্পাদনায়। তাঁর উপন্যাসগুলির প্রকাশে কেউ কি এগিয়ে আসবেন না এই শতবর্ষেও?
   


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.