সেটা এই প্রদর্শনীর একটি দিক মাত্র। এই প্রদর্শনী আকৃষ্ট করে আরও অনেকগুলি বৈশিষ্টের জন্য। তার একটি হল ঘোড়ার বিবর্তন। এ কথা সকলেই জানেন, সুনীল দাস ঘোড়ার ছবির জন্য বিখ্যাত। কলকাতার সরকারি আর্ট কলেজে ১৯৫৯ সালে তিনি যখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, তখনই তিনি ললিত কলা অ্যাকাডেমির জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন ঘোড়ার ড্রয়িং-এর জন্য। সেই ঘোড়া তিনি এখনও নিরন্তর এঁকে যান। সেই ষাটের দশকের ঘোড়া আর আজকের ঘোড়ায় কি কোনও পার্থক্য আছে? এই প্রদর্শনী আমাদের আরও একবার বুঝতে সাহায্য করল। আসলে তাঁর ঘোড়া তো নিছকই ঘোড়ার অবয়বে শেষ হয়ে যায় না। তার ভিতর থাকে যেমন শিল্পীর চৈতন্যের তেমনই দেশ-কালের আলো-আঁধারি। ১৯৫৯-৬০-এর অনেক ঘোড়া আছে এই প্রদর্শনীতে। তাদের শীর্ণ অবয়বের মধ্যে অনুভব করা যায় রিক্ততার আভাস। এই রিক্ততার মধ্যে বিষাদবোধ সেই সময়ের কিছু সারাৎসারকে মেলে ধরে দর্শকের সামনে। ২০১০ সালেও তিনি ঘোড়া এঁকেছেন। অনেক সম্ভ্রান্ত সেই ঘোড়া। অনেক জঙ্গম, অনেক উচ্চকিত, অশান্ততায় আলোড়িত। ঠিক আজকের সময়টা যেমন। এই যে সময়ের গভীর গোপন অন্তঃসারকে মথিত করে উপযুক্ত প্রতীক গড়ে তোলা, এটাই একজন শিল্পীর প্রধান সামাজিক অবদান।
সেই ১৯৫৮-৫৯ থেকে আজ পর্যন্ত সুনীল অজস্র বিষয়, অজস্র আঙ্গিক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। আঙ্গিক বা রূপভাবনার এ রকম ব্যাপ্তি খুব বড় শিল্পীর মধ্যেই দেখা যায়। এই প্রদর্শনীতেও তার কিছু কিছু দৃষ্টান্ত আছে। এই বৈচিত্রের মধ্যে একটি লক্ষ্যে শিল্পী স্থির থেকেছেন।
বছর দুয়েক আগে শুধু ভাস্কর্য নিয়েই একটি প্রদর্শনী হয়েছে তাঁর। এই প্রদর্শনীতে ঘোড়ার মুখের ত্রিমাত্রিক ব্রোঞ্জগুলিতে এমন এক অভিব্যক্তি পাই যা ছবির থেকে একেবারেই আলাদা। এই প্রতীকেও শিল্পী বিশ্লিষ্ট সময়ের গভীর কালিমাকেই ধরেন। ত্রিমাত্রার যে অতিরিক্ত বৈশিষ্টগুলি, তাকে প্রকৃষ্ট ব্যবহার করেন। শরীরের উপরিতলের নানা খাঁজ, অনেক অন্ধকার জমে থাকে। বর্ণের বিচ্ছুরণেও অভিব্যক্তির নানা সূক্ষ্ম আলোছায়ার খেলা চলে। ঘোড়া বা ষাঁড়-প্রাণী পরিচয়কে ছাপিয়ে হয়ে ওঠে সময়েরই প্রতীক। |