|
|
|
|
জলের শত্রুরা কাবু হতে পারে জোটে |
ভূজয়া ভৌমিক • কলকাতা |
এ যেন জোট গড়ে ক্ষমতাবৃদ্ধি!
কতকটা এমনই মনে হতে পারে জল পরিষ্কার করার এক নয়া উপায়ের কথা শুনলে। কারণ, দু’টি পদার্থের মধ্যে আক্ষরিক অর্থেই জোট তৈরি করে জল পরিষ্কার করার নতুন এক পথের হদিস দিয়েছেন এক দল গবেষক। সেই দলে রয়েছেন এক বাঙালি গবেষকও, মৈনাক মজুমদার। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। তবে তাঁরা জল শোধনের এই গবেষণাটি করেছেন মার্কিন মুলুকে।
আনন্দবাজারকে দেওয়া এক ই-মেল সাক্ষাৎকারে মৈনাক জানিয়েছেন, জল শোধনের জন্য তাঁরা যে জোট গড়েছেন, তার দু’টি পক্ষ। দু’টিই আমাদের অতি পরিচিত। বালি আর গ্রাফাইট অর্থাৎ পেনসিলের সিস।
সাধারণ ভাবে, জল পরিষ্কার করার কাজে বালির ব্যবহার বহু পুরনো। ভারত এবং গ্রিসের প্রাচীন লেখাতেও বালির সাহায্যে জল পরিষ্কার করার উল্লেখ পাওয়া যায়। হালফিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-ও এই পদ্ধতিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জল পরিশোধনের কাজে গ্রাফাইটের ব্যবহারও নতুন নয়। তবে, বালি ও গ্রাফাইটকে জোটবদ্ধ করার প্রয়াস এই প্রথম। মৈনাকদের দাবি, দূষিত জল পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে নতুন এই জোটের ক্ষমতা বেশ কিছু বাজারচলতি জলপরিশোধকের থেকে অনেকটাই বেশি। |
মৈনাক মজুমদার |
কী ভাবে ওঁরা বানালেন এই নতুন জোট? ই-সাক্ষাৎকারে সেই কাহিনি জানিয়েছেন মৈনাক। জোট তৈরির কাজে নামার আগে গ্রাফাইটকে গড়েপিটে গ্রাফাইট অক্সাইড তৈরি করে নিতে হয়েছে তাঁদের। সেই গ্রাফাইট অক্সাইড এবং বালি মেশানো হয় জলে। এ ভাবেই তৈরি হয় ‘জোটের ময়দান’। সেই ময়দানে দুই জোটসঙ্গীকে আরও কাছাকাছি আনতে প্রয়োজন হয় ‘একটু উষ্ণতার’! ১০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পাক্কা দু’ঘণ্টা রাখা হয় মিশ্রণটিকে। এই দীর্ঘ ‘বোঝাপড়া’র মধ্যে দিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে তৈরি হয় মজবুত এবং স্থিতিশীল জোট। |
|
বালির প্রতিটি ক্ষুদ্র কণার চারপাশে তৈরি হয় গ্রাফাইট অক্সাইডের একটি আস্তরণ। এই দানাগুলিই জল পরিশোধনে মৈনাকদের হাতিয়ার। জল থেকে দূষণ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন পদার্থ ছেঁকে বাদ দেওয়ার কিছুটা ক্ষমতা রয়েছে সাধারণ বালির। যে কারণে সাধারণ ফিল্টারের একটি স্তরে এটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তবে বালি-গ্রাফাইট অক্সাইডের মেলবন্ধন কিছু বিশেষ রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য এনে দেয়। যে কারণে এর জল শোধনের ক্ষমতা বেড়ে যায়। আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটির বিজ্ঞানপত্রিকা ‘অ্যাপ্লায়েড মেটেরিয়ালস অ্যান্ড ইন্টারফেসেস’-এর সর্বশেষ সংখ্যায় এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।
তবে গ্রাফাইট অক্সাইড মাখানো বালি দানার জলশোধনের ক্ষমতা ঠিক কতটা, তা অবশ্য এখনও গবেষণাগারের বাইরে যাচাই করা হয়নি। তবে এই নতুন পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা ঠিক কোথায়? মৈনাক বললেন, “বালি এবং গ্রাফাইট দু’টিই অত্যন্ত সহজলভ্য এবং সস্তা। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পরিষ্কার পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী হতে পারে এই ব্যবস্থা।”
আমেরিকার রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেটেরিয়ালস সায়েন্স বিভাগের গবেষকদের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করে এই সাফল্য পেয়েছেন মৈনাকরা। গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত পুলিকেল অজয়ন। দলের অন্যতম সদস্য হলেন ওয়েই গাও।
মৈনাক জানিয়েছেন, এই নতুন আবিষ্কারকে বাজারজাত করার চেষ্টা চালাচ্ছে তাঁদের একটি সহযোগী সংস্থা। সে চেষ্টা সফল হলে বিশ্বের এক বিরাট সংখ্যক মানুষ উপকৃত হবেন বলে আশা এই তরুণ গবেষকের।
আপাতত তারই প্রতীক্ষা। |
|
|
|
|
|