|
|
|
|
 |
ডকু-নাটক ৭৫ পার,
নিশান বইছে মহানগর
জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায় • কলকাতা |
|
কখনও পোখরান, কখনও সংসদ হামলা। কখনও জঙ্গলমহল, কখনও রোজেনবার্গ মামলা।
সকালের খবরের কাগজে যে শিরোনাম চোখ আটকায়, সেই শিরোনাম কি উঠে আসতে পারে নাটকের মঞ্চে? মঞ্চের উপরে কি জন্ম নিতে পারে এক জীবন্ত সংবাদমাধ্যম?
এ শহরের নাটমঞ্চ এমন অভিজ্ঞতার সাক্ষী। কিন্তু ‘১৬ মিলিমিটার’, ‘তেত্রি কহানি’, ‘১৯শে জুন’ বা ‘ফিঙ্গারপ্রিন্টস ২৬/১১’-এর মতো নাটক যে আন্তর্জাতিক নাট্য-আদর্শকে সামনে রেখে তৈরি, তার নাম ‘ডকু থিয়েটার’। আমেরিকার বিভিন্ন শহরে তিরিশের দশকে অভিনীত ‘ট্রিপল-এ প্লাউয়েড আন্ডার’, ‘ইনজাংশন গ্রান্টেড’, ‘ওয়ান থার্ড অফ আ নেশন’-এর মতো নাটকই ‘গ্রাউন্ড জিরো’ বা ‘ইশতিসহাদি’-র পূর্বসূরি।
সংবাদকে জীবন্ত করে তোলার ভাবনা থেকেই ৭৫ বছর আগে তৈরি হয়েছিল ‘ডকু থিয়েটার’-এর কাজ। ১৯৩৬ সালের ১৪ জুন তার পথচলা শুরু হয় মার্কিন দেশে। তথ্যনিষ্ঠ, গবেষণাধর্মী নাট্যচর্চা বা ডকুমেন্টারি থিয়েটারের যে ঘরানা তার আগে এবং পরে সারা পৃথিবী জুড়েই পরিচিত, ‘ডকু থিয়েটার’ ছিল তার চেয়ে কিছুটা স্বতন্ত্র। শুধু সংবাদমাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করাই নয়। তথ্য যাচাই এবং নিজেরাই প্রকাশিত/অপ্রকাশিত নথিপত্র, তদন্ত-রিপোর্ট ঘেঁটে তথ্য আহরণ করাকে তাঁরা অবশ্যকর্তব্য বলে মনে করতেন।
‘ডকু থিয়েটারে’র হোতা ছিল আমেরিকার ‘ফেডেরাল থিয়েটার প্রোজেক্ট’ নামে একটি গোষ্ঠী। ১৯৩৯ সালে দলটি ভেঙে যায়। ‘ডকু থিয়েটার’ তৈরির কাজ কিন্তু আজও চলছে। চলছে এই শহরেই। ‘ডকু থিয়েটারে’র ৭৫তম বর্ষপূর্তিতে তাই নাট্যপরিচালক সংগ্রাম গুহ একবাক্যে বলছেন, “লেনা গোল্ডস্মিথ, হ্যানিয়ে ফ্লানাগান, আর্নল্ড সানগার্ড, আর্থার আরন্ট লিভিং নিউজপেপারের এই পুরোধারাই আমার আদর্শ।” হ্যাঁ, মঞ্চে সংবাদ পরিবেশনের এই নাট্যরীতিকে ‘লিভিং নিউজপেপার’ই বলা হত তিরিশের দশকের আমেরিকায়।
কলকাতায় সংগ্রাম এবং তাঁর নাট্যদল গত ১২ বছর ধরে এই ধারায় নাটক করে আসছেন। পোখরান পরমাণু বিস্ফোরণ, সংসদ হামলা বা ২৬/১১-র মতো বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমে পরিবেশিত খবরের গণ্ডি ছাড়িয়ে নিজস্ব গবেষণা এবং বহু নথিপত্র ঘেঁটে বার করে আনা তথ্যের ভিত্তিতে নাটক করেছেন। এর বাইরেও একাধিক দল ‘ডকু থিয়েটারে’র রাস্তায় হেঁটেছে। কৌশিক সেন যেমন রোজেনবার্গ মামলা নিয়ে গণনাট্য সঙ্ঘের একটি পুরনো নাটক সম্প্রতি নতুন করে করেন। তাতে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বাইরে সরাসরি নিউ ইয়র্কের বামপন্থী সংগঠনগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য আনা হয়েছিল। জঙ্গলমহলের পটভূমিতে ‘তেত্রি কহানি’ করতে গিয়ে নিজে ওই অঞ্চলে গিয়ে প্রচুর তথ্য জড়ো করেছিলেন, অনেকটা অংশ শু্যট করে এনেছিলেন দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। নাটকটা দেখানোই হয়েছিল এক তথ্যচিত্র পরিচালকের চোখ দিয়ে।
নাটক যত বেশি করে সমসময়ের কথা বলবে, তত বেশি করে গবেষণা এবং তথ্যনিষ্ঠতার প্রয়োজন বাড়বে বলে মনে করেন দেবেশ। ‘ডকু থিয়েটারে’র গুরুত্ব সেখানেই। ‘‘বন্ধুদের সাহায্যে নিউ ইয়র্কে যোগাযোগ না হলে এবং ওই তথ্যগুলো না পেলে ‘১৯শে জুন’ নাটকটা করতেই পারতাম না”, বললেন কৌশিক। আর সংগ্রাম ‘ডকু থিয়েটার’ই করে যেতে চান সারা জীবন। নইলে আর থিয়েটার ‘লোকশিক্ষা’র বাহন কীসে? |
|
|
 |
|
|