অনুমতির বালাই নেই, বালি চুরি দেদার
নুমতি রয়েছে মাত্র ছ’টির। আদতে চলছে শ’খানেক।
আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে দামোদর ও অজয়ের পাড়ে হাজারখানেক ডাম্পার দাঁড় করিয়ে রমরমিয়ে বালি তোলা চলে দিনের পর দিন। এমনকী নদীতে যন্ত্র বসিয়ে তুলে নেওয়া হচ্ছে বালি। দিনের আলোয় শহরের মধ্যে দিয়ে ট্রাক, ডাম্পারে করে সে সব পাচার হচ্ছে দেদার।
বুধবারই রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমানে এসে জানিয়েছেন, নদী থেকে বালি তোলা বন্ধ করতে কড়া আইন আনতে চলেছে রাজ্য। তাতে অভিযুক্তের অনুযায়ী জেল, জরিমানাদু’রকম শাস্তিই হতে পারে। সেচমন্ত্রী বলেন, “নতুন আইন তৈরি করে আইনমন্ত্রীকে দেখিয়ে মার্চ থেকেই তা বলবৎ করার পরিকল্পনা রয়েছে। নচেৎ বেআইনি ভাবে বালি তোলা বন্ধ করা সম্ভব নয়।” এ ভাবে বালি চুরিতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বেনিয়ম রোখার দায়িত্বে থাকা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তাদের যদিও দাবি, এই পাচার রুখতে তাঁরা নিয়মিত অভিযান চালান।
ডিসেরগড়ে দামোদরের পাড়ে বালি তোলা হচ্ছে যন্ত্র দিয়ে। —নিজস্ব চিত্র।
ভূমি ও ভূমি-রাজস্ব দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল মহকুমায় বৈধ বালিঘাট রয়েছে পাঁচটি। তার মধ্যে অজয়ের পাড়ে চিত্তরঞ্জনের ফতেপুরের কাছে দু’টি এবং জামুড়িয়ায় দেশেরমহান ও দরবারডাঙায় একটি করে বালিঘাট আছে। দামোদরে রানিগঞ্জের কাছে তিরাটে একটি বালিঘাট রয়েছে। কিন্তু মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় অজয় ও দামোদরের পাড়ে ঘুরলেই দেখা যায় কয়েকশো অবৈধ বালিঘাটে চলছে বালি তোলা। যেমন, কুলটিতে বরাকর, মনবেড়িয়া, বালতোড়িয়া, ডিসেরগড়। বার্নপুরের কালাঝরিয়া, শ্যামডিহি, চাপরাইদ, ধেনুয়া। রূপনারায়ণপুরের জিতপুর ও আশেপাশের অঞ্চল। জামুড়িয়ার আনন্দপুর, বীরকুলটি, চুরুলিয়া। রানিগঞ্জের আমকোলা, এগারা, বল্লভপুর নুপুর, জেমারি, নিমচা এলাকায় চলছে অবৈধ বালি খাদান। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট গঠনের পরে অবৈধ কয়লা কারবারে খানিকটা ভাটা পড়েছে। কিন্তু রমরমা বেড়েছে এই বালি চুরিতে। প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের মতে, কয়লা ও লোহা কারবারিদের একাংশ ঝুঁকেছেন বালি চুরিতে। আর তাদের দাপাদাপিতে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের।
দুর্গাপুর মহকুমায় পাণ্ডবেশ্বর লাগোয়া দেশলোপা মৌজায় পন্থনগরে একটি মাত্র অনুমোদিত বালিঘাট রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে, কাঁকসায় দামোদরের পাড়ে রনডিহা, বামনাবেরা, সিলামপুর, অজয়ের পাড়ে দেউল, কাজলাডিহি, কাঞ্চনপুর, নারকেলবাগান। অন্ডালের মদনপুর, কুটিরডাঙা। দুর্গাপুরের ওয়ারিয়া। লাউদোহার মাধাইপুর, রসিকডাঙা। এ ছাড়া সিউড়ি-রানিগঞ্জ জাতীয় সড়ক লাগোয়া অজয়ের পাড়েও অবাধে বালি তোলা চলছে। এই সব এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, কয়েক হাজার লোক এই কাজে যুক্ত। কুলটির ডিসেরগড়ে এক শ্রমিক বলেন, “আমরা কাজ করছি। চুরির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক নেই। তা মালিক বুঝবে।’’ মালিকের সঙ্গে দেখা করতে হলে আরও কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান তিনি। প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে দেখা মিলল সেই মালিক শেখ আসফাকের। তিনি সাফ বললেন, “আমাদের এখানে কেউ আসে না। আমি এই বালি আশপাশের এলাকায় বিক্রি করি।”
বর্ধমান জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অশোক সাহা মেনে নেন, এ ভাবে বালি চুরির জেরে বিপুল রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, “এই অবৈধ বালি কারবার বন্ধের জন্য আমি দফতরের মহকুমা ও ব্লকের আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছি। বেশ কিছু ধরা হয়েছে, জরিমনাও হয়েছে।” অশোকবাবু জানান, তাঁরা ছাড়াও অজয় ও দামোদরের পাড়ে বেশির ভাগ অংশের বালি তোলার অনুমোদন দেয় বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও বীরভূম জেলা প্রশাসন। সেই অংশের বালি অবৈধ ভাবে শিল্পাঞ্চলের রাস্তা দিয়ে পাচার হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য মহকুমা এবং ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জানান, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ বালি বোঝাই প্রচুর ডাম্পার ও ট্রাক্টর ধরা হয়েছে। জরিমানাও আদায় করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও যে এই বেআইনি কারবারে রাশ টানা যায়নি, অজয়-দামোদরের পাড়ে গেলেই মালুম পড়ে। মহকুমাশাসকের আশ্বাস, “আবার চিরুনি অভিযান চালানো হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.